ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর গত এক বছরে জার্মানিতে খাদ্যপণ্যের দাম অনেকটাই বেড়েছে৷ ২০২২ সালের জানুয়ারির তুলনায় খাদ্যপণ্য-সহ সবকিছুর দাম এ বছরের জানুয়ারিতে বেড়েছে৷ এই ব্লগটি লিখতে বসার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে একটা ইমেইল পেলাম, যেখানে লেখা হয়েছে ‘জার্মানিতে সবকিছুর দাম বেড়েছে, তার প্রভাব পড়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গণেও৷ তাই আমরা চেষ্টা করেও দাম না বাড়িয়ে পারছি না৷ এখন থেকে মাসে ৫ ইউরো বেশি দেয়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হল৷’ ই-মেইলে এই চিঠিটা এসেছে আমার মেয়ের গানের স্কুল থেকে৷ এটা একটা উদাহরণ৷ এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বেড়েছে বাড়ি ভাড়া৷ একেবারে ১০০ ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ হাজার টাকা)৷ পাশাপাশি বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বেড়েই চলেছে৷ বাড়ি ভাড়া, যাতায়াতের খরচ, স্কুলের বেতন এবং খাওয়া ও প্রতিদিনের খরচ শেষে আজকাল সঞ্চয় আর থাকছে না৷ গত ছয় মাসে আয়-ব্যয় প্রায় সমান সমান৷
আগে যেখানে ১০ থেকে ১৫ ইউরো হলে ব্যাগ ভরতি বাজার করা যেত, এখন সেখানে একই পরিমাণ বাজারে খরচ হয় ৪০ থেকে ৪৫ ইউরো৷ বেড়েছে বিমানের ভাড়াও৷ একটা উদাহরণ দেই৷ কোলন-বন বিমানবন্দর থেকে লন্ডনে যাওয়ার সর্বনিম্ন বিমান টিকেট ৭ থেকে ৯ ইউরো ছিল৷ এখন এক বছর আগেও যদি আপনি টিকেট কাটেন ৩৫ ইউরোর নিচে পাবেন না৷
জার্মানির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বিভাগের সাম্প্রতিক তথ্য দিলেই বুঝতে পারবেন জার্মানির দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কতটা৷ তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে মাখন এবং ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, ৪৯ শতাংশ৷ আগে যেখানে ১ ইউরো খরচ করে ১ লিটার ভোজ্যতেল কেনা যেত এখন সেই তেল কিনতে হচ্ছে রকমভেদে ২.৭৯ থেকে ৩.৯৯ ইউরোতে৷ যুদ্ধ শুরুর পর পর তেলের দাম প্রায় ৫ গুণ বেড়ে গিয়েছিল, এমনকি টাকা খরচ করেও কোথাও তেল পাওয়া যাচ্ছিল না৷ সেই সংকট মিটলেও দাম এখনও বাড়তি৷ ডিমের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ৷ মাংস এবং মাংসজাত পণ্যের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে৷ গম ও শস্যজাত পণ্যের দাম প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে৷
এমনকি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে খাবারের জন্য সাধারণ ভোক্তারা ১.৮ শতাংশ বেশি ব্যয় করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছে জার্মানির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বিভাগ ৷ তবে সবজি আর দুগ্ধজাত পণ্যের দাম ততটা বাড়েনি৷ সবজি ৪ শতাংশ বেড়েছে এবং দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বেড়েছে ২.২ শতাংশ৷
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জার্মানিতে ভোজ্যতেল এবং গমের দাম বাড়া স্বাভাবিক৷ কারণ ভোজ্য তেল এবং গমের জন্য দেশটি ইউক্রেনের উপর নির্ভরশীল এবং গ্যাসের জন্য রাশিয়ার উপর৷ এই নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে জার্মানি৷ নিজেদের উৎপাদনের দিকে জোর দিচ্ছে৷
বাংলাদেশি সবজি, চাল, দেশি মাছ, সরিষার তেলের জন্য আমাদের ভরসা বাংলাদেশি দোকান৷ সেখানকার বিক্রেতাও জানালেন করোনায় একদফা দাম বাড়ার পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আর এক দফা দাম বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বেচাবিক্রিতে৷ দাম বাড়ার কারণে অনেকেই এখন আগের মত দেশি সবজি, তেল, ইলিশ মাছ কিনছেন না বলে জানান তিনি৷ এমন কি আগে যেখানে বিশেষ উৎসবগুলিতে মাছ, মাংস কেনার ধুম পড়ে যেত, সেখানেও চিত্রটা বদলেছে৷ ছাগলের মাংস যেটা নেদারল্যান্ডস থেকে বন শহরে আসে সেটার দাম ছিল প্রতি কেজি ৬.৯৯ ইউরো, এখন তা কেজিতে ২.৫ ইউরো বেড়েছে৷ আধা লিটার সরিষার তেলের বোতলের দাম বেড়েছে এক ইউরো করে৷ চিনিগুড়া চাল কেজিতে বেড়েছে ১ ইউরো৷
আগে যেখানে ক্যাফেতে গিয়ে প্রতিদিন কফি আর কেক খাওয়া ছিল জীবযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ সেখানেও রাশ টানতে হচ্ছে৷ কারণ বেড়েছে কফি এবং কেকের দাম৷ এমন কি মাসে ইন্টারনেটের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছু ক্যাফেতে ফ্রি ওয়াইফাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ গত বছরের শেষে জার্মানিতে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে পৌঁছেছিল৷ ১৯৯০ এর পর এটাই সর্বোচ্চ৷ জ্বালানি এবং খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার ফলে অন্যান্য সব জিনিসের দাম বেড়েছে৷ ফলে বেড়ে গিয়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়৷
এবার আসি বাসা ভাড়ার ব্যাপারে৷ একজন ব্যক্তি যদি ২০২১ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য ৪৫০ ইউরো খরচ করে থাকে, ২০২২ সালে তাকে দিতে হয়েছে ১২৬০ ইউরো৷ আর ছোট পরিবারের গ্যাস খরচ বছরে ১৪০০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ইউরোতে৷ যদিও এ বছরের জানুয়ারিতে এসে গ্যাসের দাম যুদ্ধের আগের বছরের চেয়েও কমেছিল৷ কিন্তু তা আবারও বাড়তে শুরু করেছে৷
কিন্তু এত সবের মধ্যেও জার্মান সরকার সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার খরচ কিছুটা বাঁচাতে গ্রীষ্মে নয় ইউরোর টিকেট চালু করেছিল৷ যে টিকেট দিয়ে গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত পুরো জার্মানিতে যাত্রীরা ট্রেনে চেপে ঘুরতে পেরেছেন৷ এছাড়া চলতি বছর দুই ধাপে চাকুরিজীবীদের প্রত্যেককে তিন হাজার ইউরো করে বোনাস দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া যাদের সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি, তাদেরও কয়েক মাস পর পর বোনাসের ব্যবস্থা আছে৷
জার্মানিতে এই যখন অবস্থা তখন দেশ থেকে মা ফোনে বলেন জানিস খাসির মাংস এখন কত কেজি? শাকের আঁটি, ছোট মাছ, ডিমের দাম বেড়েই চলেছে৷ তার একটাই প্রশ্ন: মধ্যবিত্তরাই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, গরীব মানুষ কী করবে? তখন একটাই প্রশ্ন মনে আসে- আচ্ছা এসব পণ্যের জন্য বাংলাদেশ তো কারও ওপর নির্ভরশীল নয়৷ তাহলে এসব খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ কী!
এই খবর ইউনিকাস প্রতিস্থাপন করেনি তাই এর কোনো কৃতিত্ব অথবা দ্বায়িত্ব ইউনিকাস এর নয়। দয়া করে এর উৎস টি খুঁটিয়ে দেখুন। এই পোস্ট টি আপত্তিকর হলে, তা অবিলম্বে মুছে ফেলতে আমাদের সত্বর যোগাযোগ করুন।