ঘরের মাঠ বরাবরই পয়া এটিকে মোহনবাগানের কাছে। পরপর দুই মরশুম গোয়ায় জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থেকে আইএসএল খেলার পরে সবুজ-মেরুন বাহিনী যখন যুবভারতীতে নেমেছে, তখনই সমর্থকদের উল্লাসে উজ্জীবিত হয়ে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। পরিসংখ্যান বলছে চলতি আইএসএলে এটিকে মোহনবাগান ঘরের মাঠে ১১টি ম্যাচ খেলেছে এবং তার মধ্যে আটটিতেই জিতেছে।
সোমবার ঘরের মাঠে আরও একটি ম্যাচ রয়েছে এবং সেটি সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগ। যে ম্যাচ জিততে পারলে আগামী শনিবার ফাইনালের লড়াইয়ে নামবে তারা। যদিও ফাইনালে ওঠা তাদের নতুন নয়। আইএসএলে তাদের অভিষেকের বছরেই ফাইনালে উঠেছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিপিন সিংয়ের গোলে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে ১-২ হেরে আশাহত হয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। ফাইনালে ওঠা নতুন না হলেও, খেতাব জয় এখনও হয়ে ওঠেনি ভারতের অন্যতম সেরা ক্লাবের।
তবে সে সব নিয়ে এখন ভাবছেনই না স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো ও তাঁর দলের ছেলেরা। এখন তাঁদের একটাই লক্ষ্য, সোমবার ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ এফসি-কে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা। সঙ্গে গত বারের সেমিতে হারের বদলা নেওয়া। হায়দরাবাদে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের প্রথম লেগের অভিজ্ঞতা এবং ঘরের মাঠে সমর্থকদের শব্দব্রহ্মের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জয়ের পরিকল্পনাতেই ব্যস্ত এটিকে মোহনবাগান শিবির।
ছন্দে সবুজ-মেরুন বাহিনী
গত বৃহস্পতিবার জিএমসি বালাযোগী স্টেডিয়ামে কোনও গোল করতে না পারলেও ম্যাচের সবচেয়ে সহজ দুটি গোলের সুযোগ পায় এটিকে মোহনবাগান-ই। প্রীতম কোটাল এবং মনবীর সিং এই দু’টি গোল করতে পারলে, সেই দিন জয়ের হাসি মুখে নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারত তারা।
⦾ নাটকীয় সেমিতে সাডেন ডেথে লিগশিল্ডজয়ীদের হারিয়ে ফাইনালে বেঙ্গালুরু
এই মরশুমে যে মাঠে মাত্র দু’টি ম্যাচ হেরেছে হায়দরাবাদ, সেই মাঠে সেমিফাইনালের মতো ম্যাচ খেলতে নেমে তাদের সঙ্গে ড্র করাটা সহজ ছিল না। এখন দেখার, নিজেদের ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ এফসি-কে হারিয়ে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড দ্বিতীয় বার আইএসএল ফাইনালে খেলার সুযোগ পায় কিনা।
চ্যাম্পিয়নদের কঠিন চ্যালেঞ্জ
গত বারের চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি গত ম্যাচে শুরুতে ঝড় তুললেও, দ্বিতীয়ার্ধে তাদের কিছুটা দিশাহারা লেগেছে। দু’সপ্তাহ বিশ্রামের পর খেলতে নামলেও শেষ ৪৫ মিনিট কিছুটা হলেও ক্লান্ত লেগেছে দলের তারকাদের। তবে গত বারের চ্যাম্পিয়নের খেতাব নিজেদের দখলে রাখাটাই যেখানে সবচেয়ে বড় প্রেরণা, সেখানে তারা সহজেই হার মানবেন, এমনটা মনে করা মোটেই উচিত নয়।
এ ছাড়া এই মরশুমে অ্যাওয়ে ম্যাচে তাদের রেকর্ড মোটেই খারাপ নয়। বাইরের মাঠে দশটি ম্যাচের মধ্যে সাতটিতেই জিতেছে তারা। তবে কলকাতায় এসে ইস্টবেঙ্গলকে হারালেও, এটিকে মোহনবাগানকে হারাতে পারেনি তারা।
ঘরের মাঠে আবেগই অস্ত্র
দলটার মধ্যে আবেগের প্রভাব যে খুবই বেশি, সে কথা কোচ নিজেও স্বীকার করেছেন একাধিক বার। যে কারণে যেমন দলের ক্ষতিও হয়েছে, তেমনই লাভও হয়েছে। গত বারের সেমিফাইনালে হারের কথা মাথায় রেখে এই ম্যাচে মাঠে নামলে তাই হয়তো বৌমাস, মনবীর, লিস্টনরা জ্বলে উঠতে পারেন। ফর্মে ফেরার এমন সুবর্ণ সুযোগ বোধহয় আর পাবেন না মনবীর আর লিস্টন। বদলার মনোভাব, ঘরের মাঠ, নিজেদের সমর্থকদের চিৎকার— নিজেদের ছন্দে ফেরানোর জন্য এর চেয়ে আদর্শ পরিবেশ আর কী হতে পারে?
⦾ আক্রমণের ঝড় তোলো, ৯০ মিনিটে ম্যাচ জেতো- ATKMB-র পরিকল্পনার কথা জানালেন ফেরান্দো
গোড়ালির চোটের জন্য গত ম্যাচেও খেলতে পারেননি আশিক কুরুনিয়ান। সম্ভবত এই ম্যাচেও খেলতে পারবেন না তিনি। তবে একটা ভালো খবর হল গ্ল্যান মার্টিন্স ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তিনি হয়তো হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় লেগে ফের মাঝমাঠ সামলানোর দায়িত্ব নেবেন। কার্ল ম্যাকহিউয়ের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া যথেষ্ট ভালো। এর সুফল নিশ্চয়ই পাবে তাঁদের দল।
গত ম্যাচে দুর্ভেদ্য রক্ষণ গড়ে তুলতে দেখা যায় এটিকে মোহনবাগানকে। এমনিতে দুই দলেরই রক্ষণ এ বারের লিগে সবচেয়ে শক্তিশালী। এখনও পর্যন্ত দুই দলই এগারোটি করে ম্যাচে কোনও গোল খায়নি। গত বৃহস্পতিবার তারা ২০১৯-২০-তে বেঙ্গালুরুর ১১টি ক্লিন শিটের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে। এ বারের লিগে সবচেয়ে কম গোলও খেয়েছে এই দুই দলই। এটিকে মোহনবাগান ১৭ ও হায়দরাবাদ ১৬। তাই গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ডিফেন্ডারদের দ্বৈরথ দেখা যাবে যুবভারতীতে।
দ্বৈরথের ইতিহাস
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট ন’বার। তার মধ্যে চারটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। তিনবার জেতে এটিকে মোহনবাগান ও দু’টি ম্যাচে হায়দরাবাদ এফসি। এ বারের লিগে প্রথমে জেতে এটিকে মোহনবাগান, পরে তার বদলা নিয়ে নেয় হায়দরাবাদ এফসি। দুই ম্যাচেই ফল হয় ১-০। দুই দলের ম্যাচে এখনও পর্যন্ত মোট ২০টি গোল হয়েছে। দশটি করে গোল করেছে দুই দলই।
এই খবর ইউনিকাস প্রতিস্থাপন করেনি তাই এর কোনো কৃতিত্ব অথবা দ্বায়িত্ব ইউনিকাস এর নয়। দয়া করে এর উৎস টি খুঁটিয়ে দেখুন। এই পোস্ট টি আপত্তিকর হলে, তা অবিলম্বে মুছে ফেলতে আমাদের সত্বর যোগাযোগ করুন।